Header Ads

Header ADS

অনলাইন আরনিং নাকি টাকা আত্মসাতের ফাঁদ ?




শুরুর কথাঃ

সম্প্রতি একটি অনলাইন বিজ্ঞাপন এর দিকে আকর্ষিত হয়ে একটি অনলাইন আয়ের সাইটে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করি । ইচ্ছা ছিলো ঘরে বসে অনলাইনে কাজ করে কিছু বারতি আয় করা আগেই বলে রাখি কোন প্রোকার লোভে পড়ে না সম্পূর্ণ প্রোয়োজনের তাগিদেই এই কাজের জন্য রেজিস্টেশন করা।

যাই হোক, অনেক দিন ধরেই অনলাইনে একটি কাজের জন্য অনেক গুলো চাটুকদার বিজ্ঞাপন দেখছি এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান এর সাথে কল করে কথা বলেছি অনেক লিংক এর মাধ্যমে বিভিন্ন কাজের ও ফ্রি মাস্টার ক্লাস এর জন্য রেজিস্ট্রেশন করে ক্লাস করেছি কিন্তু সব গুলো ব্যাপারের দিন শেষে রেসাল্ট একটাই হয়তো তাদের ট্রেইনিং করতে হবে আর না হয় কোন নির্দিষ্ট পরিমান এড ফি দিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।

সেলস ফানেলঃ

একজন বকার মানুষ কিংবা একজন স্টুডেন্ট এর পক্ষে ৮/১০ হাজার টাকা দিয়ে কোন ট্রেইনিং এ জয়েন হওয়া কি এতো সহজ?  আজকাল মানুষ কে পোলোভন দেখিয়ে অনেজ প্রতিষ্ঠান তাদের বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে এবং অনেক বেকার মানুষ তাদের (ফাঁদে) না সেলস ফানেলে ধরা দিচ্ছে এবং হতাশা গ্রস্থ হচ্ছে। এর জন্য আসলে আমাদের সমাজ এর শিক্ষা ব্যাবস্থা কে কতটা দায়ী করা যায় তা আমার জানা নাই কিংবা এ নিয়ে আমার কিছু বলারও নাই আমি একজন নগণ্য মানুষ।

যাক জেটা বলতে গিয়ে এই আলোচনার সুত্রপাত সেটা বলি অনলাইন আয়ের সাইটে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার পর আমার কাছে একটি হোয়াটস আপ নাম্বার চাওয়া হলো আমি কৌতূহল বসত হয়ে আমার হোয়াটস আপ নাম্বারটি দিলাম এরপর আমার সাথে লিসা নামে একজন চ্যাট শুরু করলেন ।

 
তিনি আমার নাম , বয়স, এবং পেশা জানতে চাইলেন, আমিও রিতিমত সব তথ্য দিয়ে নিজেকে সহায়তা করলাম কারন জাবটা আমার দরকার উনার না।


                 

 কাজটা কি?

লিসা আমাকে জানালো এটি একটি অনলাইন জব আমি এখান থেকে পার্ট টাইম / ফুল টাইম কাজ করে প্রোতিদিন ৫০০-২০০০০ টাকা আয় কররে পারবো এটা শুনার পর আমার মনে হইলো আমি যদি এখান থেকে ২০০ টাকাও প্রতিদিন আয় করতে পারি তাও ভালো। সাথে সে এটাও বল্লো  আমি এই কাজ ঘরে বসেই করতে পারবো। সন্দেহ প্রবন হয়ে আমি জানতে চাইলাম আপনাদের কাজটা কি?


লিসা আমাকে জানালো তারা এ্যমাজন, ওয়াল মারট, ফ্লিপ কার্ড, ইন্ডিয়া মারট, স্ন্যাপ ডিল, পেয়মাল ইত্যাদি ইকমারস সাইটের সাথে তাদের চুক্তি আছে আমাকে তাদের প্রোডাক্ট এর ভালো রিভিউ দিতে হবে এবং ভারটুয়াল ক্রয় করার ভিক্তিতে তাদের মার্চেন্ট আমাকে ২০০-১৫০০ টাকা কমিশন দিবে এভাবে আমি একাধিক কাজ করে ৫০০-২০০০০ টাকা আয় করতে পারবো।

আমার কাছে তাদের কাজের কথাগুলো একটু পরিচিত মনে হলো , মানে বুঝলেন না এলাকাবাসী , বেকার দরদী অনেকের মুখে শুনছিলাম যে ওমুকে মাসে এতো টাকা কামাইতেসে অনলাইনে তুমি সারাদিন কি কর কম্পিউটারে বসে? তাই আমিও ভাবলাম যাক এবার তাহলে একটা আয়ের লাইন পেয়েই গেলাম।

টাকা কিভাবে পাবো? 

আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম আমিতো বাংলাদেশে থাকি তাহলে আমি আমার কাজের টাকা কিভাবে পাবো? লিসা জানালো আমি টাকা আমার বিকাশে পেয়ে যাবো।


 

ট্রেইনিং করতে হবে ?

এরপর লিসা আমাকে তাদের ঐতিহাসিক জয়েনিং এর লিংক টা দিলো আমি লিংকটা দেখলাম এবং বরাবরের মতো আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম জয়েনিং এর জন্য কি কোন ফি দিতে হবে? অথবা কোন ট্রেইনিং করতে হবে লিসা আমাকে জানালো না এসব কিছু লাগবেনা বরং তারা আমাকে ৬০ টাকা ভরতুকি সিসেবে দিবে। আমি আসসস্ত হলাম এবং লিংক ক্লিক করে আকাউন্ট ওপেন করে ফেললাম।


একন্ট খোলার পর আমিতো মাহা খুশি কারন এ্যমাজন, ওয়াল মারট, ফ্লিপ কার্ড, ইন্ডিয়া মারট, স্ন্যাপ ডিল, পেয়মাল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সাথে আমি একজন এমপ্লয় হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি এবং লিসা যেমন বলেছিল একাউন্ট ওপেন করলে আমাকে ৬০ টাকা দেয়া হবে আমি সেটা পেয়েছি তাই একটু বিশ্বাস টা তৈরী হইলো তাদের প্রতি। এর পরে লিসা কে জানাইলাম যে আমি তো একাউন্ট ওপেন করে ফেলসি আমাকে এখন কাজ দাও এরপর লিসা যা শুনাইলো তাতে বিশ্বাসের ভেতর আবার সন্দেহ উকি দেয়া শুরু করলো।


 


 
একাউন্ট এক্টিভঃ

লিসা আমাকে জানাইলো এখন আমার একাউন্ট এক্টিভ করতে হবে এবং এই জন্য আমাকে ২০০ টাকা রিচারজ করতে হবে। শুনে মেজাজটা চরম খারাপ হয়ে গেলো। আবার মন কে শান্তনা দিলাম যে এতো বড় বড় ইকমারস সাইটের কাজ করবো তারা আমাকে কমিশন দিবে ডলারে হয়তো এই জন্য টাকা লাগতে পারে। ২০০ টাকা দিয়ে একাউন্ট এক্টিভ করে নিলাম।



কমিশন আয়ঃ 

এরপর কাজ শুরু করার জন্য লিসা আমাকে তাদের একটি টেলিগ্রাম একাউন্টে জয়েন হওয়ার লিঙ্ক দিল আমি উদগ্রীব হয়ে সেই লিঙ্ক এর মাধ্যমে টেলিগ্রামে জয়েন হলাম এবং কিভাবে কাজটি করে আয় করবো সে সম্পর্কে জানলাম ও প্রথম কাজটি সম্পন্ন করলাম। প্রথম কাজটি সম্পন্ন করার পর লিসার কথা মতো আমি কমিশন পেলাম ১৩০ টাকা এবং একাউন্ট এক্টিভেট করতে দিয়ে ছিলাম ২০০ টাকা এবং তারা আমাকে ভর্তুকি হিসেবে দিয়েছিল ৬০ টাকা। সব মিলিয়ে আমি ৩৭০ টাকা আয় করলাম তাদের টাকা উত্তোলনের চার্জ বাদে। আমিতো মহা খুশি এবার আমার আর কোন টেনশন নাই আল্লাহর রহমতে একটা ভালো কাজের সন্ধান পাইসি। এখন থেকে এখানে কাজ করে আমার বেকারত্ব ঘুচবে।



পরবর্তী কাজের জন্য করনীয়ঃ

যাই হোক এরপর আমি আবার আমার পরবর্তী কাজের জন্য টেলগ্রামে আমার যে ইন্সট্রাক্টর আছেন উনাকে অনুরোধ করলাম উনি আমাকে জানালেন পরবর্তী যেই কাজটি আমি সম্পন্ন করতে চাচ্ছি সেটার জন্য আমি আরো বেশি কমিশন পেতে পারি কিন্তু এই কাজটি সম্পন্ন করতে হলে আমাকে কমপক্ষে ৫০০ টাকা রিচারজ করতে হবে। উনি আমাকে একটি লিস্ট প্রেরন করেন যেখানে রিচারজ এর পরিমাণ এবং সম্ভাব্য কমিশন কতো পেতে পারি তা উল্লেখ করা ছিলো। যেহেতু আমি ইতিমধ্যে ২০০ টাকা দিয়ে ১৩০+৬০=১৯০ টাকা হাতে পেয়ে গিয়েছি আর এখন আমার একাউন্ট ব্যেলেন্স=০ তাই পরবর্তী কাজটি করার জন্য আমাকে ৫০০ টাকা রিচারজ করতেই হবে এবং আমি তাই  করলাম।


রিচারজের পর আমি যথা রিতি কাজ করতে শুরু করলাম , উনি আমাকে ৫টি অর্ডার সম্পন্ন করার একটি কাজ দিলেন আমি ২টি অর্ডার সম্পন্ন করার পর সেখান থেকে আরো ১৮৫ টাকা কমিশন পাই কিন্তু ৩ নাম্বার অর্ডারটি সম্পন্ন করার জন্য আমি যখন কাজ শুরু করি তখন আমাকে নোটিশ দেয় অর্ডারটি সম্পন্ন করার জন্য আমার পর্যাপ্ত ব্যাল্যান্স নাই, আমাকে আবার ৪৫৬ টাকা রিচারজ করতে হবে।


 ২য় কমিশন আয়ঃ

আমি একটু টেনশনে পরে গেলাম আমি কি কোনো ফাঁদে পরে যাচ্ছি? প্রথমেই ৫০০ টাকা রিচারজ করলাম এখন আবার ৪৬০ টাকা মোট=৯৬০ টাকা আমি ইনভেস্ট করে ফেলতেসি কিন্তু কমিশন পেলাম মাত্র ১৮৫ টাকা তাও সেটা এখনো হাতে পাইনাই। যদিও প্রথমে আমাকে ২০০ টাকার বিনিময়ে ১৯০ টাকা ফেরত দিয়েছে কিন্তু বিষয়টা এমন নাতো যে অল্প টাকা ফেরত দিয়ে এখন বেশি টাকা রেখে দিবে? কিছুটা ভয় আর কিছুটা আশা নিয়ে (ছেলে মানুষের আয় না থাকলে যা হয়) আবার ৪৬০ টাকা রিচারজ করে ফেললাম এবং পর্যায়ক্রমে ৪ ও ৫ নাম্বার কাজটিও সম্পন্ন করলাম। এবং সব মিলিয়ে আয় হলো ২৩০০ টাকা যেখান থেকে ৫০০+৪৬০=৯৬০ টাকা বাদ দিয়ে আমার কমিশন পাই ১৩৪০ টাকা। মনটা আবার আনন্দে ভরে গেলো । (যদিও আমি একাউন্টে ৫০০ টাকা রেখে ১৮০০ টাকা উত্তোলোন করেছিলাম।) এবং উত্তোলোন এর চার্জ কেটে হাতে ১৭১০ টাকা পেয়ে ছিলাম। অর্থাৎ আমার প্রকৃত আয় হয়েছিলো ১৭১০-৯৬০=৭৫০ টাকা । 






৩য় কমিশন প্রাপ্তির জন্য কাজঃ

এই আরটিকেলের যে ঘটনা আমি বলছি তার আসল ক্লাইমেক্স টা এখানেই । আমি যখন পর পর ২ট কমিশন পেয়ে গেলাম এবং ছোট খাটো মনের সন্দেহ কাটিয়ে বিশ্বাসের দরি ধরে আরো একটু আয় করার জন্য কাজ শুরু করার মুন স্থির করলাম এবং আমার টেলিগ্রাম এর ইন্সট্রাক্টর কে আবারো আমার জন্য আরেকটি কাজ দিতে বললাম এবং সেই কাজটি করার জন্য আমি আবার ১০০০ টাকা রিচারজ করলাম ঠিক তখনই ঘটলো একটি অঘটন যেটার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। এবার আমার টেলিগ্রাম এর ইন্সট্রাক্টর আমাকে ৬টি কাজ দেয় যার মধ্যে আমি ২টি কাজ সম্পন্ন করার পর আমাকে আবারো ৫৮৭ টাকা রিচারজ করতে বলে এবং আমি যেহেতু এর আগেরবারে রিচারজ করে কাজ সম্পন্ন করেছি এবং কমিশন ও পেয়েছি তাই এবার আমি রিচারজ করতে দ্বিধা করিনাই।

কিন্তু ৪ নাম্বার কাজটি করতে গেলে আমার ব্যাল্যান্স আবারো শেষ হয়ে যায় এবং আমাকে ২১০৯ টাকা রিচারজ করতে বললে আমি কিছুটা শঙ্কায় পরে যাই। কিন্তু তারপরও আমি কিছুটা শঙ্কা আর ভয় নিয়ে রিচারজ করি এই ভেবে যে হয়তো এটাই লাস্ট রিচারজ এরপরে আমার কাজ সপন্ন হয়ে যাবে আর আমি কমিশন পেয়ে যাবো। কিন্তু ৫ নাম্বার কাজটি করতে যেয়ে ১৫,৯৩৭ টাকার একটি অর্ডার এর কাজ সম্পন্ন করার জন্য আমাকে ৮,৩৪৮ টাকা রিচারজ করতে বলে তখন আমার পায়ের নিচে আর মাটি থাকেনা আমি চরমভাবে হতাশা গ্রস্থ হয়ে পরি ।


যদিও আমার ব্যাল্যান্স এ কমিশন সহ ৭,৫৮৯ টাকা দেখাচ্ছে এবং এই কাজটি করলে আমাকে আরো ৪,৭৮১ টাকা কমিশন দিবে কিন্তু ৬ নাম্বার কাজটির জন্য যে আবারো একটি বড় অংকের টাকা রিচারজ করতে বলবে না তার কোন নিশ্চয়তা কি আছে? তাছাড়া আমি ইতি মধ্যে যে ৫৮৭+২১০৯=২৬৯৬ টাকা রিচারজ করেছি এবং আরো ৮৩৪৮=১১০৪৪ টাকা সেটা যে শেষ পর্যন্ত পাবো তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে?


তাই এই সকল অনলাইন আয়ের ফাঁদে পা না দিয়ে আমি বলবো ভালো কোন একটি ইন্সটিটিউট থেকে Digital marketing | Graphic Design | Data Entry এর মতো যে কোনো একটি বিষয়ে নিজের দক্ষতা অর্জন করুন এবং Fiver কিংবা Up work অথবা Freelancer এর মতো মার্কেট প্লেসে কাজ করে অনলাইনে আয় করুন।    

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.